Header Ads

Header ADS

অনেকেই জানেন না বামনত্ব কেন হয় - Bangla Wow - Tahmid Abrar



আপনি জানেন কী? বামনত্বও এক ধরনের শারীরিক সমস্যা। অপুষ্টি বা নানা রোগের কারণ এবং পারিবারিক কারণেও মানুষ বামনত্বের কবলে পড়তে পারে। আর এই সমস্যার বিজ্ঞানভিত্তিক চিকিৎসাও রয়েছে। ছোটবেলায় বামনত্বে আক্রান্ত হয়েছিলেন বিশ্বখ্যাত ফুটবলার লিওনেল মেসিও। তিনি এই সমস্যার কারনে দীর্ঘদিন চিকিৎসার আওতায়ও ছিলেন। তবে আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষই এই সমস্যা নির্ণয় ও এর চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে তেমন বিশেষ ধারনা রাখে না। কিন্তু এসব সমস্যার সফল চিকিৎসা এখন আমাদের দেশেও সুলভ।
কী করে বুঝবেন আপনার শিশু বাড়ছে না:
একটি শিশু যদি তার সমবয়সীদের তুলনায় কম উচ্চতাসম্পন্ন হয়, তবেই অভিভাবকরা এ নিয়ে চিন্তিত হতে পারেন। জেনে রাখুন একেক বয়সে উচ্চতা বৃদ্ধির হার একেক রকম। দুই বছর বয়স পর্যন্ত শিশু বছরে ২০ থেকে ৩০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। এরপর এ হার কমে আসে এবং ৫-৬ বছর বয়স পর্যন্ত এই হার বার্ষিক ১০-১২ সেন্টিমিটার হয়। ৬-৭ বছরে আরো কমে বছরে ৫-৬ সেন্টিমিটার হারে বাড়ে। আবার বয়ঃসন্ধিকালে হঠাৎ করেই লম্বা হওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায় এবং বছরে ১০-১৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বাড়তে থাকে। ১৪-১৫ বছরের পর থেকে বৃদ্ধির হার আবারও কমতে থাকে, গড়ে ১ সেন্টিমিটার হারে বেড়ে চলে ১৯ থেকে ২১ বছর বয়স পর্যন্ত। এরপর বৃদ্ধি থেমে যায়।
শিশুর বৃদ্ধি কেন ব্যাহত হয়:
অনেকটাই জিন ও পরিবেশগত বিষয়ের ওপর নির্ভর করে একটি শিশুর শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি, ঠিক তেমনি নির্ভর করে তার সার্বিক সুস্থতা ও হরমোনের ওঠানামার ওপর। উচ্চতার প্রবণতা একেক এলাকায় ও একেক পরিবারে একেক রকম। এছাড়াও কিডনি বা ফুসফুসের রোগ, অপুষ্টি, হজমের গোলমাল- শৈশবে এসব দীর্ঘমেয়াদি সমস্যার কারনে শিশুর বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। শরীরের প্রায় সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বৃদ্ধি যে হরমোনগুলো নিয়ন্ত্রণ করে তার মধ্যে থাইরয়েড ও গ্রোথ হরমোন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি থমকে যেতে পারে বা ধীর হতে পারে  এ হরমোনগুলোর অভাবে। এছাড়াও নানা ধরনের জেনেটিক সমস্যায় মানুষ খাটো হয়, যেমন টার্নার বা ডাউন সিনড্রোমে।
বৃদ্ধি প্রতিবন্ধকতা কী কী সমস্যার সৃষ্টি করে:
একটি শিশু নানা ধরনের শারীরিক ও মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত হয় ঠিকমতো বৃদ্ধি না হলে। অনেক সময় এর সঙ্গে যৌবনপ্রাপ্ত না হওয়ার সমস্যাও দেখা দেয়, যা পরে তার বিবাহ, সন্তান ধারণ বা পারিবারিক জীবনকে ব্যাহত করে। এছাড়াও টিজিং ও বুলিংয়ের শিকার হয় বেশি, সমাজে একঘরে হয়ে পড়ে, শিক্ষা বা কর্মক্ষেত্রে অনেক সময় মেধা থাকা সত্ত্বেও পিছিয়ে পড়ে খাটো শিশুরাখাটো শিশুরা।
বৃদ্ধি প্রতিবন্ধকতার চিকিৎসা:
বামনাকৃতি শিশুদের চিকিৎসা ছিল দুর্লভ কৃত্রিম গ্রোথ হরমোন আবিষ্কৃত হওয়ার আগে। কারন তখন মৃতদেহের পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে হরমোন নির্যাস সংগ্রহ করা হতো এবং এতে প্রায়ই প্রতিক্রিয়া ও নানা রোগের আশঙ্কা থাকত। এ পদ্ধতি বাতিল হয় ১৯৮৫ সালে। এরপর বর্তমানে কৃত্রিম গ্রোথ হরমোন সোমাট্রপিন বা নরডিট্রোপিন দিয়ে সাফল্যের সঙ্গে এর চিকিৎসা করা হচ্ছে। বর্তমানে যে কয়েকটি সমস্যায় গ্রোথ হরমোন থেরাপি ব্যবহৃত হয় তা হলো-
১. বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত শিশু, যার গ্রোথ হরমোন অপর্যাপ্ত
২. টার্নার সিনড্রোম
৩. কম ওজন ও ছোট আকার নিয়ে ভূমিষ্ঠ শিশু
৪. কিডনি জটিলতায় আক্রান্ত হওয়ার কারণে যাদের বৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে
একটি নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত প্রতিদিন রাতে নির্দিষ্ট মাত্রার গ্রোথ হরমোন ইনজেকশন দেওয়া হয় এবং পর্যবেক্ষণ করা হয় চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী।
দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে গ্রোথ হরমোনের সমস্যা ছাড়া বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হওয়ার অন্য কোনো কারণ থাকলে সঠিক কারণটি নির্ণয় করে সে অনুযায়ী। এক্ষেত্রে দুটি বিষয় মনে রাখবেন-
১। সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় ও পরামর্শ নেওয়া
২। যত কম বয়সে চিকিৎসা শুরু করা যায় ততই ভালো ফল পাওয়া যায়।
কৈশোর বা তারুণ্যে এসে উচ্চতা বৃদ্ধি কি সম্ভব?
আমাদের দেশে কৈশোরে বা তারুণ্যে এসে উচ্চতা সমস্যা নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টি হয়। উচ্চতা বাড়ানোর কৌশল হিসেবে নানা বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয় এবং নানা ধরনের অবৈজ্ঞানিক চিকিৎসার আশ্রয় নেয়, যখন একটি তরুণ বা তরুণী দেখে যে সে আর দশজনের মতো নয়।যত দিন পর্যন্ত লম্বা হাড়ের শেষ মাথায় অবস্থিত তরুণাস্থি বা প্লেটটি হাড়ের সঙ্গে মিশে না যায় আমাদের হাড়ের উচ্চতা তত দিনই বাড়ে।
হরমোনের প্রভাবে এই প্লেট মূল হাড়ের সঙ্গে মিশে যায় বা ফিউশন হয়ে যায় এবং এরপর আর হাড় লম্বায় বাড়তে পারে না যৌবন প্রাপ্ত হলে। ছেলেদের বেলায় ১৬ বছর ও মেয়েদের ১৪ বছরের মধ্যে সাধারণত এই ফিউশন ঘটে। যদিও ১৯ থেকে ২১ বছর পর্যন্ত আরো কিছুটা উচ্চতা বৃদ্ধি হতে পারে, তবু ফিউশন হয়ে যাওয়ার পর চিকিৎসা করলেও তেমন কোনো ফল পাওয়া যায় না।



No comments

Powered by Blogger.